আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - আত্মকর্মসংস্থান | NCTB BOOK

আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্য ও ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের উপর। তাই আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন ।

  • সঠিক পণ্য নির্বাচন
    ব্যবসার জন্য সঠিক পণ্য নির্বাচন সাফল্য লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত। পণ্য নির্বাচনের পূর্বে বাজারে পণ্যটির চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা যথাযথভাবে নিরূপণ করতে হবে।
  • প্রাথমিক মূলধন
    ব্যবসায় সফলতার সাথে পরিচালনার জন্য স্থায়ী ও চলতি মূলধন পর্যাপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনীয় মূলধন নির্ধারণ ও সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে ব্যবসায়ের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। চলতি পুঁজির অভাবে বাংলাদেশের অনেক শিল্প-কারখানা উৎপাদন ক্ষমতার মাত্রা অনুযায়ী পরিচালিত হতে পারে না ।
  • পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ
    বাজার জরিপ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্যের সঠিক চাহিদা নিরূপণ ব্যবসায়ে সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। তাছাড়া পণ্যের বাজারের পরিধি এবং বাজারজাতকরণের কৌশল পূর্বেই যথার্থভাবে নিরূপণ করতে হবে। উদ্যোক্তার ব্যবসা সম্পর্কে পূর্ব-অভিজ্ঞতা এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবসায় সফল হতে।
  • অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা
    সাহায্য করে। গবেষণার ফল থেকে দেখা গেছে যে, কোনো ব্যবসায়ের ব্যর্থতার প্রধান কারণ হচ্ছে মালিকদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থাপনা কলাকৌশল সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব ।
  • নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সজাগ থাকা
    শিল্পোদ্যোক্তা যদি তার নিজের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সম্বন্ধে সজাগ থাকেন তবে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংকট এড়ানো যায় ৷
  • যৌথ উদ্যোগ
    পারিবারিক সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগ ব্যবসায়ের সফলতা, অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ৷ যে সকল ব্যবসায় যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত আছে সে সকল ব্যবসায় বেশি সফল হতে দেখা যায় ।
  • সঠিক কর্মী নির্বাচন
    ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে সব কর্মী নিয়োগ করা হবে তাদেরকে অবশ্যই যোগ্যতা সম্পন্ন এবং স্বীয় কাজে দক্ষ হতে হবে। কাজেই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা, বিশ্বস্ততা প্রভৃতি মানদণ্ডের ভিত্তিতে যাচাই করে নির্বাচন করতে হবে। নিয়োগকৃত কর্মীকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে কোনো কর্মী নিয়োগ করা উচিত নয় ।
  • ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন 

    ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঁচামালের সহজলভ্যতা,বাজারজাতকরণের সুবিধা, অবকাঠামোগত সুবিধা প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন।

  • সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার
    উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রয়োজনবোধে স্থানীয় ও আমদানিকৃত প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ব্যবসার সাফল্য অর্জনের পথ সুগম করে। ব্যবসা শুরু করার পূর্বে উদ্যোক্তাদের এ বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন ।

  • দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত থাকা

    দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যবসায়ের সাফল্যকে প্রভাবিত করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে দেশের চলমান আর্থ- সামাজিক অবস্থা সম্যকভাবে অবহিত থাকতে হয় এবং সে আলোকে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হয়। অধিকন্তু ব্যবসায় সাফল্য লাভ করতে হলে যে সব বিষয় ব্যবসায় কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে সে সব বিষয় সম্বন্ধে অবহিত থাকতে হবে ।

  • ব্যবসায় ঝুঁকি মোকাবেলায় উপায় অবলম্বন
    ব্যবসা সংক্রান্ত ঝুঁকি আগেই নিরূপণ করে তার মোকাবেলা করার কৌশল স্থির করে রাখলে অনিশ্চয়তাজনিত ক্ষতির হাত থেকে ব্যবসাকে রক্ষা করা যায়। কাজেই উপযুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবসায় ঝুঁকি নিরূপণ ও তা মোকাবেলার উপায় নির্ধারণ ব্যবসায় সাফল্য লাভের অন্যতম শর্ত ।

  • ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ
    ব্যবসায় একবার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করে হতাশ হওয়ার পরিবর্তে শিক্ষা গ্রহণ করে নতুনভাবে কাজ শুরু করার মধ্যে ব্যবসায়ের সাফল্য নিহিত।

  • সুষ্ঠু ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন
    ব্যবসায় সফলতা অর্জনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন। ব্যবসায়ে হাত দেওয়ার পূর্বেই ব্যবসার কাজ কখন এবং কীভাবে করা হবে তা অগ্রিম চিন্তা করে ঠিক করাই হচ্ছে পরিকল্পনা। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা হচ্ছে দিকনির্দেশনা দলিল। পরিকল্পনা প্রণয়ন যত বেশি সমৃদ্ধ হবে ব্যবসায়ে সফল হওয়ার নিশ্চয়তাও তত বেশি হবে।





 



 

Content added By
Promotion